উকিল নোটিশ কি ও কেন ???
কোনো ব্যক্তি দ্বারা মৌখিক, আর্থিক অথবা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রাথমিকভাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে উকিল নোটিশ দিতে হয়। কারো বিরুদ্ধে মামলা করার আগে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এ নোটিশ দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নোটিশের জবাব না এলে তখন মামলা দায়ের করতে হয়।
উকিল নোটিশ কি ?
যেকোনো মামলার কার্যক্রম শুরুর আগে প্রতিপক্ষকে উকিল নোটিশ দিতে হয়। সাধারণত মামলার বাদীপক্ষ নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে এই নোটিশ প্রেরণ করে। উকিল নোটিশে নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ করে বলা হয়, নির্দিষ্ট এই সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নোটিশে কত দিন সময় দিতে হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে সরকার প্রতিপক্ষ হলে এক মাস সময় দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। অন্যদের ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টা থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। এর পর সরকারি ডাকযোগে প্রতিপক্ষকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা বরাবর পাঠাতে হয়।
কিভাবে বাংলাদেশে আইনি নোটিশ পাঠাতে হয়
আপনি যদি একজন ব্যবসার মালিক হন যিনি বাংলাদেশের একজন গ্রাহক বা কর্মচারীকে আইনি নোটিশ পাঠাতে চান, তাহলে আপনার কিছু জিনিস জানা দরকার। বাংলাদেশে একটি আইনি নোটিশ পাঠানো আপনার অধিকার রক্ষা এবং আপনার চুক্তি কার্যকর করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
বাংলাদেশে আইনি নোটিশ পাঠানোর কয়েকটি ভিন্ন উপায় আছে, কিন্তু সবচেয়ে সাধারণ হল ডাকের মাধ্যমে। আপনি ইলেকট্রনিকভাবে একটি আইনি নোটিশ পাঠাতে পারেন, কিন্তু এটি কম সাধারণ।
একটি আইনি নোটিশ পাঠানোর সময়, আপনার সর্বদা নিম্নলিখিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:
- আপনি যে ব্যক্তি বা কোম্পানিকে নোটিশ পাঠাচ্ছেন তার নাম
- আপনি নোটিশ পাঠানোর তারিখ এবং সময়
- নোটিশের সাথে আপনি যে নথিটি পাঠাচ্ছেন
- প্রাপকের ঠিকানা
- প্রাপকের ফোন নম্বর
- প্রাপকের ইমেল ঠিকানা
- প্রাপকের স্বাক্ষর
আপনি যদি ইলেকট্রনিকভাবে একটি আইনি নোটিশ পাঠান, তাহলে আপনাকে নিম্নলিখিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে:
- ইমেইলের বিষয়
- প্রেরকের নাম
- প্রেরকের ইমেল ঠিকানা
- প্রাপকের নাম
- প্রাপকের ফোন নম্বর
- প্রাপকের ইমেল ঠিকানা
- প্রাপকের স্বাক্ষর
প্রাপকের ইমেল ঠিকানায় নোটিশের সাথে আপনি যে নথিটি পাঠাচ্ছেন তার একটি অনুলিপিও আপনাকে পাঠাতে হবে।
যদি প্রাপক নোটিশটি না পান বা যদি তারা এটি গ্রহণ না করেন, তবে তারা আপনাকে জানাতে আপনার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
বাংলাদেশে আইনি নোটিশ পাঠানোর সময় সর্বদা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে ভুলবেন না। যদি আপনি তা না করেন, তাহলে আপনি আপনার অধিকার হারাবেন বা আপনার কেস আপনার আশার মতো সফল নাও হতে পারে।
আপনি যদি বাংলাদেশে একজন ব্যবসার মালিক হন, তাহলে আপনাকে কাউকে আইনি নোটিশ পাঠাতে হতে পারে। এই নথিটি আপনার অধিকার প্রয়োগ করতে এবং আপনার সম্পত্তি রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। কীভাবে আইনি নোটিশ পাঠাতে হয় তার একটি নির্দেশিকা এখানে।
একটি আইনি নোটিশ পাঠানোর সময়, নিম্নলিখিতগুলি মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ:
-আপনি যাকে নোটিশ পাঠাচ্ছেন তাকে নোটিশ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে
- বিজ্ঞপ্তি লিখিত আকারে হতে হবে
- বিজ্ঞপ্তিটি এমনভাবে বিতরণ করা উচিত যাতে প্রাপক এটি বুঝতে পারে
- বিজ্ঞপ্তিতে তারিখ এবং স্বাক্ষর করা উচিত
- নোটিশে পদক্ষেপ নেওয়ার কারণ উল্লেখ করতে হবে
একবার আপনি নোটিশ পাঠানোর পরে, আপনার একটি প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করা উচিত। প্রাপক সাড়া না দিলে, আপনি আদালতে মামলা দায়েরের মতো আরও পদক্ষেপ নিতে পারেন।
মামলা দায়ের
উকিল নোটিশ পাঠানোর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উকিল নোটিশের সঠিক জবাব বা প্রতিকার না পেলে নোটিশ প্রেরণকারী আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে মামলা করতে পারবেন। নোটিশে উল্লেখ করা সুনির্দিষ্ট মেয়াদের আগে মামলা করা যায় না।
আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ
হাইকোর্টে মামলা পরিচালনার জন্য সাধারণত হাইকোর্টের নিবন্ধনযুক্ত আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ প্রেরণের দায়িত্ব প্রদান করতে হয়। আর জেলা জজ আদালতে মামলা পরিচালনার জন্য জজ আদালতে মামলা পরিচালনা করেন এমন আইনজীবীকে দিয়ে উকিল নোটিশ দিতে হয়। উকিল নোটিশ প্রেরণের ক্ষেত্রে আইনজীবীকে ফি দিতে হয়। অধিকাংশ আইনজীবী উকিল নোটিশ দেওয়ার আগে ওকালতনামায় স্বাক্ষর নেন। তবে উকিল নোটিশের সঙ্গে আদালতের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মামলা পরিচালনার জন্য যেকোনো আইনজীবীর কাছেই যাওয়া যেতে পারে।আইনজীবীরা বিভিন্ন ধরনের মামলা পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করেন। কাজেই কোন আইনজীবী কোন বিষয়ে দক্ষ, সেটি জেনে আইনজীবী বাছাই করা ভালো। আর পরিচিতদের মাধ্যমেও আইনজীবীদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা যেতে পারে।
ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় অবস্থিত ল’ ফার্মগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা যেতে পারে। আবার ব্যক্তিগতভাবেও কাউকে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।
মামলার দায়িত্ব দেওয়া
ওকালতনামা বা একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে আইনজীবীকে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার দায়িত্ব দিতে হয়। একবার আইনজীবীকে দায়িত্ব দেওয়ার পর তার লিখিত সম্মতি ছাড়া অন্য কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা পরিচালনার সুযোগ থাকে না।
মামলার খরচ
মামলায় খরচ হয় সাধারণত দুই ভাবে। একটি আইনজীবীর ফি বাবদ, অন্যটি দাপ্তরিক খরচ বাবদ। আইনজীবীর ফির অঙ্ক নির্দিষ্ট নয়। বিভিন্ন আইনজীবী নানা ধরনের মামলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অঙ্কের ফি নেন। স্বাভাবিকভাবেই জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ফির অঙ্কটা বেশি হয়। মামলার ধরন বুঝে দাপ্তরিক খরচ নির্ধারিত হয়।
মামলা শুরু করা
এ কাজটি আইনজীবী বা তাঁর সহকারী করে থাকেন। কোর্ট অফিসে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের করলে সেখানে একটি নম্বর দেওয়া হয়। এর পর কোর্টের একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করাতে হয়। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কার্যতালিকা অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে শুনানি সম্পন্ন করা হয়। মামলার একাধিক দিন শুনানি হতে পারে। প্রতিপক্ষকে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য সময় দেওয়া হতে পারে। তবে এর মাঝে বেঞ্চ ভেঙে দেওয়া হলে পুনরায় অন্য একটি বেঞ্চের কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। এ কার্যতালিকাকে কজলিস্ট বলা হয়।
0 Comments