২০২৪ সালের বাংলাদেশের উত্তরাধিকার আইন বা মুসলিম উত্তরাধিকার আইন
শেয়ারার কারা এবং প্রাথমিক উত্তরাধিকার (Primary heirs) কারা এবং তাদের অংশঃ
#শেয়ারার কারা: পবিত্র কোরআনে ১২ জনের অংশ নির্ধারিত করে দিয়েছে। যাদের আমরা শেয়ারার বলে থাকি। এই ১২ জন হলেন–
১. বাবা
২. মা
৩. স্বামী
৪. স্ত্রী
৫.কন্যা
৬. পুত্রের কন্যা
৭. দাদা
৮. দাদি
৯. আপন বোন
১০. বৈপিত্রেয় বোন
১১. বৈমাত্রেয় বোন
১২. বৈমাত্রেয় ভাই
এইবার আমাদের দ্বিতীয় পয়েন্টে আসি। প্রাথমিক উত্তরাধিকারী বা Primary Heirs কারা এবং তাদের অংশ কতখানি। আসুন জেনে নেয়া যাক–
প্রাথমিক উত্তরাধিকারী হলেন তারা, যারা কখনও সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হন না। এদের সংখ্যা ছয়। আর তারা হলেন-
১. স্বামী
২. স্ত্রী
৩.বাবা
৪. মা
৫. কন্যা
৬. পুত্র
আসুন এবার জেনে নেয়া যাক এদের অংশ সম্পর্কে
১. স্বামী/Husband
স্বামীর অংশ দুʼধরনের হয়ে থাকে। তা হলো-
১/২ বা অর্ধেক অংশ এবং
১/৪ বা এক-চতুর্থাংশ
#কখন ১/২ বা অর্ধেক অংশ পায়: যদি কোন সন্তান-সন্ততি না থাকে তবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ১/২ অংশ স্বামী পাবে।
#কখন ১/৪ বা এক-চতুর্থাংশ পায়: যদি সন্তান-সন্ততি থাকে তবে মৃত স্ত্রীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ স্বামী অংশীদার হিসেবে পাবে।
২. স্ত্রী/Wife
স্ত্রীর অংশ দুʼধরনের হয়ে থাকে। তা হলো-
১/৪ বা এক-চতুর্থাংশ এবং
১/৮ বা এক-অষ্টমাংশ
#কখন১/৪ বা এক-চতুর্থাংশ পাবে: যদি কোন সন্তান-সন্ততি না থাকে তবে মৃত স্বামীর সম্পত্তির ১/৪ অংশ স্ত্রী পাবে।
#কখন১/৮ বা এক-অষ্টমাংশ পাবে: যদি সন্তান-সন্ততি থাকে তবে মৃত স্বামীর সম্পত্তির ১/৮ অংশ স্ত্রী অংশীদার হিসেবে পাবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, সন্তান-সন্ততি বলতে শুধু নিজের ঔরশজাত বা গর্ভের সন্তানকে বুঝায় না এখানে স্বামী বা স্ত্রীর সকল সন্তানকে বুঝায়।
বিষয়টা একটু পরিষ্কার করা দরকার। ধরুন এক মহিলার প্রথমে এক জায়গাতে বিয়ে হওয়ার পর সেখানে দুইটা ছেলে-মেয়ে হয়। পরবর্তীতে যদি সেই মহিলার স্বামী মারা যায় বা তালাক প্রাপ্ত হয়ে অন্য আরেকজনের সাথে বিয়ে হয়। তাহলে দ্বিতীয় স্বামীর ঘরে কোন সন্তান না হলেও পূর্বের ছেলে মেয়ে থাকার কারণে স্বামীর অংশ হবে ১/৪ অংশ।
অনুরূপ এক পুরুষের যদি দুইটা বৌ থাকে এবং এক বৌয়ের গর্ভের ছেলে-মেয়ে আছে অন্য বৌয়ের গর্ভের ছেলে-মেয়ে নাই। তাহলেও অন্য বৌ ও ১/৮ অংশ পাবে।
এখানে আরেকটা বিষয় জানা দরকার যে, একের অধিক স্ত্রী থাকলে তারা সমন্বয়ে ১/৪ অংশ বা ১/৮ অংশ পাবে এবং তা নিজেদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে নিবে।
৩. বাবা/পিতা/Father
পিতার অংশ তিন ধরনের হয়ে থাকে–
১/৬ অংশ,
১/৬+অবশিষ্টাংশ(Residuary) এবং
অবশিষ্টাংশভোগী(Residuary)
#কখন১/৬ অংশ পাবে: যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র—— রেখে মারা যান তবে পিতার অংশ হবে ১/৬ অংশ।
#কখন১/৬+অবশিষ্টাংশ(Residuary) হিসেবে পায়: যদি মৃত ব্যক্তির কন্যা, পুত্রের কন্যা রেখে মারা যায় এবং কোন পুত্র বা পুত্রের পুত্র—- না থাকে তবে পিতার অংশ হবে ১/৬+অবশিষ্টাংশ।
#কখন অবশিষ্টাংশভোগী (Residuary) হিসেবে পায়: যদি কোন সন্তান-সন্ততি না থাকে তবে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে পিতা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে অংশ পাবে।
যেমন: এক মহিলা মারা গেছে তার স্বামী এবং পিতাকে রেখে। তাহলে স্বামীর অংশ হবে ১/২ অংশীদার হিসেবে আর অবশিষ্ট ১/২ পিতা পাবে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে।
৪. মা/Mother
মায়ের অংশ তিন ধরনের হয়ে থাকে—
১/৬,
১/৩ এবং
অবশিষ্টাংশের ১/৩(1/3 of residue)
#কখন ১/৬ অংশ পায়: মায়ের অংশ ১/৬ হবে নিম্নোক্ত একটি শর্ত পূরণ করলে
*যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি থাকে, কন্যা, পুত্রের পুত্র—–
*যদি মৃত ব্যক্তির দুইয়ের অধিক ভাই বা বোন থাকে। ভাই বা বোন আপন, বৈপিত্রেয় বা বৈমাত্রেয় হতে পারে।
* যদি একজন ভাই ও একজন বোনও থাকে। এখানে একজন আপন বোন ও একজন বৈপিত্রেয় বোন থাকলেও প্রযোজ্য হবে।
#কখন১/৩ অংশ পায়: নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ করলে মা ১/৩ অংশ পাবে–
* যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে
* যদি মৃত ব্যক্তির একের অধিক ভাই বা বোন না থাকে
#কখন অবশিষ্টাংশের ১/৩ অংশ পাবে: এই ব্যতিক্রম অংশ শুধু দুটি ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। যেগুলো হলো–
* যদি উত্তরাধিকারী হিসেবে স্বামী, বাবা ও মা কে রেখে কোন মহিলা মারা যান এবং
* যদি উত্তরাধিকারী হিসেবে স্ত্রী, বাবা ও মা কে রেখে কোনো পুরুষ মারা যান।
এই নীতি Umriyatin Rule হিসেবে পরিচিত।
৫. কন্যা/Daughter
কন্যার অংশ তিন ধরনের হয়ে থাকে–
১/২,
২/৩ এবং
অবশিষ্টাংশভোগী
#কখন ১/২ অংশ পাবে: দুটি শর্ত পূরণ করলে এই অংশ পাবে। তা হলো-
১। কোন পুত্র থাকবে না
২। সে একাই থাকবে অর্থাত একমাত্র কন্যা হিসেবে অংশীদার হলে
#কখন ২/৩ অংশ পাবে: দুটি শর্তে এই অংশ পাবে-
১। কোন পুত্র থাকবে না
২। দুই বা তার অধিক কন্যা থাকলে
#কখন অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পাবে:
কন্যার সাথে যদি পুত্র ও থাকে তবে কন্যা আর অংশীদার হিসেবে অংশ পায় না। তখন সে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পুত্রের সাথে ২:১ অনুপাতে অংশ পাবে। যাকে আমরা Tasib Rule বলে জানি।
৬. পুত্র/Son
পুত্রের জন্য পবিত্র কোরআনে কোনো অংশ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। তবে পুত্রের উপস্থিতিতে অনেক কুরআনিক অংশীদারদের অংশ কমে যায় আবার অনেকে পুরোপুরি বঞ্চিত হয়।
* পুত্রের উপস্থিতির জন্য অংশ কমে যায় এমন অংশীদার হলো–
মা, স্বামী, স্ত্রী, দাদা, দাদি এবং কন্যা অংশীদার হিসেবে না পেয়ে অবশিষ্টাংশভোগী (Residuary) হিসেবে অংশ পায়।
*পুত্রের উপস্থিতির জন্য উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় এমন অংশীদার হলেন—
ভাই ও বোন (আপন, বৈমাত্রেয় ও বৈপিত্রেয়)
দাদা, দাদি/নানি, এবং আপন বোনের অংশ সম্পর্কে বর্ণনা:
১। দাদা
মৃত ব্যক্তির বাবার মতো দাদার অংশও তিন ধরনের হয়ে থাকে।
১/৬+অবশিষ্টাংশ এবং
অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে।
#কখন ১/৬ অংশ পাবে:
দুটি শর্ত পূরণ করলে দাদা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ১/৬ অংশ পাবে-
1. মৃত ব্যক্তির পুত্র,পুত্রের পুত্র (যত নিচের হোক না কেন) যদি না থাকে
2. মৃত ব্যক্তির বাবা না থাকলে
বাবা জীবিত থাকলে দাদা কোন অংশ পাবে না। তবে পুত্র, পুত্রের পুত্র—- থাকলে তাদের সাথে অংশ পাবে।
#কখন ১/৬+অবশিষ্টাংশ পাবে:
মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে ১/৬+অবশিষ্টাংশ পাবে যদি কোন পুরুষ উত্তরাধিকার( পুত্র, পুত্রের পুত্র যত নিচের হোক না কেন) এবং মৃত ব্যক্তির বাবা না থাকে তবে দাদার অংশ হবে ১/৬+ অবশিষ্টাংশ।
#কখন অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পায়:
মৃত ব্যক্তির যদি কোন সন্তান বা পুত্রের কোন সন্তান না থাকে তবে দাদা অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে অংশ পাবে।
উদাহরণ: এক ব্যক্তি স্ত্রী এবং দাদা রেখে গেল। এখানে স্ত্রীর অংশ হবে ১/৪ এবং দাদার অংশ হবে ৩/৪ অংশ।
মনে রাখতে হবে, বাবা জীবিত থাকলে দাদা কোন অংশ পাবে না। বাবার কারণে দাদা পুরোপুরি বঞ্চিত হবে।
২। দাদি/ নানি
মায়ের অনুপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির দাদি/ নানি সম্পত্তির অংশ পেয়ে থাকে। উত্তরাধিকার আইনে এদের নাম দেওয়া হয়েছে
1. Paternal true grandmother (দাদি)
2. Maternal true grandmother (নানি)
এদের অংশ এক ধরনের হয়ে থাকে। যদি অন্য কোনোভাবে বঞ্চিত না হন তাহলে দাদি/নানির অংশ হবে ১/৬।
1. Paternal true grandmother: মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে দাদি ১/৬ অংশ পাবে যদি নিম্নোক্ত কেউ না থাকে—
a. Mother
b. Nearer paternal true grandmother
c. Nearer Maternal true grandmother
d. Father
e. Intermediate true grandfather
2. Maternal true grandmother: মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে নানি ১/৬ অংশ পাবে যদি নিম্নোক্ত কেউ না থাকে—
a. Mother
b. Nearer true Paternal grandmother
c. Nearer Maternal true grandmother
উদাহরণ ১: এক ব্যক্তি তার একমাত্র ছেলে, বাবা এবং নানিকে রেখে মারা গেল। এখানে বাবার অংশ হবে ১/৬, নানির অংশ হবে ১/৬ এবং অবশিষ্টাংশ ছেলে পাবে।
উদাহরণ ২: এক ব্যক্তি নানি, বাবা, মা এবং পুত্র রেখে মারা গেল। এখানে মায়ের অংশ হবে ১/৬, বাবার অংশ হবে ১/৬ এবং পুত্র পাবে অবশিষ্টাংশ। মা জীবিত থাকার জন্য নানি কোন অংশই পাবে না।
উদাহরণ ৩: এক ব্যক্তি দাদি এবং এক পুত্র রেখে মারা গেল। এখানে দাদি পাবে ১/৬ এবং পুত্র অবশিষ্টাংশ পাবে।
উদাহরণ ৪: এক ব্যক্তি তার একমাত্র পুত্র, বাবা, দাদি এবং নানি রেখে মারা গেল। এখানে বাবা পাবে ১/৬ অংশ, নানি পাবে ১/৬ অংশ এবং পুত্র অবশিষ্টাংশ পাবে। এখানে পিতা জীবিত থাকার জন্য দাদি কোন অংশ পাবে না।।
৩। আপন বোন Full sister
আপন বোন সম্পত্তিতে তিন ধরনের অংশ পেয়ে থাকে-
১/২,
২/৩ এবং
অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে
#কখন ১/২ অংশ পাবে:
সম্পত্তিতে আপন বোন ১/২ অংশ পাবে নিম্নোক্ত শর্ত পূরণ সাপেক্ষে–
1. সে একমাত্র বোন এবং
2. যেখানে নিম্নোক্ত কোন ব্যক্তি না থাকে,
ক. মৃত ভাই/বোনের কোন সন্তান
খ. মৃত ভাই/বোনের পুত্রের সন্তান
গ. বাবা
ঘ. দাদা
ঙ. আপন ভাই
উদাহরণ: এক মহিলা তার একমাত্র বোন ও স্বামীকে রেখে মারা গেল। এখানে স্বামীর অংশ হবে ১/২ এবং আপন বোন পাবে ১/২।
#কখন ২/৩ অংশ পাবে:
আপন বোন সম্পত্তিতে ২/৩ অংশ পাবে যদি তারা সংখ্যায় বা তার অধিক হয় এবং উপর্যুক্ত শর্তাবলি পূরণ সাপেক্ষে।
উদাহরণ: এক ব্যক্তি দুই আপন বোন ও দুই বৈমাত্রেয় বোন( Uterine sister) রেখে মারা গেল। এখানে আপন দুই বোন পাবে ২/৩ অংশ এবং দুই বৈমাত্রেয় বোন পাবে ১/৩ অংশ।
#কখন অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে অংশ পাবে:
দুইটা নিয়মে একজন আপন বোন সম্পত্তিতে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে অংশ পেয়ে থাকে।
১. আপন বোনের সাথে তার আপন ভাই থাকলে Tasib Rule অনুযায়ী অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে অংশ পাবে যদি না তারা অন্য কোনোভাবে বঞ্চিত না হয়।
২. যদি মৃত ভাই/বোনের এক বা তার অধিক কন্যা থাকে বা পুত্রের কন্যা থাকে তবে আপন বোন কন্যাদের অংশ দেওয়ার পরে অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে অংশ পেয়ে থাকে। এটি একটি ব্যতিক্রমী নিয়ম।
উদাহরণ ১: এক মহিলা তার একমাত্র কন্যা এবং দুই আপন বোন রেখে মারা গেল। এখানে কন্যা ১/২ অংশ পাবে এবং বাকি ১/২ অংশ অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে দুই আপন বোন পাবে।
উদাহরণ ২: এক ব্যক্তি তার পুত্রের দুই কন্যা ও তার একমাত্র আপন বোন রেখে মারা গেল। এখন পুত্রের দুই কন্যা পাবে ২/৩ অংশ এবং ১/৩ অংশ আপন বোন অবশিষ্টাংশভোগী হিসেবে পাবে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ১৯৬১ সালের পরে থেকে প্রতিনিধিত্ব নীতি অনুযায়ী পুত্রের কন্যা তার মৃত বাবাকে প্রতিনিধিত্ব করে থাকে এবং পুত্রের মতোই অংশ পেয়ে থাকে। ১৯৬১ সালের পর থেকে আপন বোন মৃত ব্যক্তির পুত্রের কন্যার উপস্থিতির জন্য কোন অংশ পায় না।
আপন বোন সম্পত্তির অংশ হতে পুরোপুরিই বঞ্চিত হন যদি নিম্নোক্ত কেউ থাকে:
১. মৃত ভাই/বোনের পুত্র
২. মৃত ভাই/বোনের পুত্রের পুত্র
৩. বাবা
৪. দাদা
৫. ১৯৬১ সালের পর থেকে মৃত ভাই/বোনের পূর্বে মৃত পুত্রের কন্যা থাকলেও আপন বোন কোন অংশ পায় না
উদাহরণ: এক মহিলা তারা বাবা, স্বামী ও এক আপন বোন রেখে মারা গেল। এখানে স্বামী পাবে ১/২ অংশ এবং বাকি অংশ বাবা পাবে। এবং বাবা জীবিত থাকার জন্য আপন বোন কোনো অংশ পাবে না।
0 Comments